Posted on Aug 04, 2024 11:01:37 AM.
বেআইনিভাবে শেয়ার লেনদেনে অভিযুক্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে বাঁচাতে মরিয়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) নির্দেশনাও আমলে নেওয়া হয়নি। এফআইডি থেকে তার বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইনের ২১ ধারায় তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়। কিন্তু কোনো ধরনের তদন্ত কমিটি গঠন না করেই তাকে নিরপরাধ বলে অর্থ মন্ত্রণালয় রিপোর্ট দিয়েছে। এক্ষেত্রে ডিএসই তদন্ত কমিটিকেও প্রভাবিত করেছে বিএসইসি। বিএসইসির পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে ডিএসইর তদন্ত কমিটিকে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে কারসাজির তথ্য মেলেনি। তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএসইর তদন্ত কমিটির প্রধান কাওসার আহমেদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বিদ্যমান আইন অনুসারে এ বিষয় তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারেন না। জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, বিএসইসি তদন্ত কমিটি করেনি। কিন্তু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। সেই কমিটি ইতোমধ্যে রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্টটি আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। প্রসঙ্গত, বিধি লঙ্ঘন করে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের প্রভাবশালী সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুলাহ আল মাহমুদের শেয়ার লেনদেন নিয়ে গত ৬ জুন রিপোর্ট প্রকাশ করে দৈনিক যুগান্তর। ব্যক্তিগতভাবে বেশি মাত্রায় লাভবান হওয়ার জন্য কারসাজিতে সহায়তা করেছেন। তিনি বিভিন্ন কারসাজিসহ বিভিন্ন কোম্পানির ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন। যুগান্তরের দীর্ঘ অনুসন্ধানে বিশদ তথ্য-প্রমাণসহ এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের এই অধ্যাপককে ডিএসইর পর্ষদে নিয়োগ দেয় বিএসইসি। এদিকে যুগান্তরে রিপোর্ট প্রকাশের পর শেয়ারবাজারে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৫ জুন নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব ফরিদা ইয়াসমিনের স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ২১ ধারামতে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ডিএসইর এই স্বতন্ত্র পরিচালক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (বোর্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) রেজ্যুলেশন ২০২৩-এর ধারা ৮ (২) (এ), ৮(২)(বি), ৮(২)(ডি), ৮(৩)(১)-সহ বিএসইসি এবং ডিএসই এ কর্তৃক অনুসৃত অন্যান্য আইন, বিধি, প্রবিধি অথবা নির্দেশনা পরিপন্থি কোনো কাজ করছেন কি না, ডিএসই তার তদন্ত করে প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। তদন্তের স্বার্থে তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত ডিএসইর পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুলাহ আল মাহমুদ স্বীয় কাজ থেকে বিরত থাকবেন। প্রতিষ্ঠানের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে বিএসইসিকে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করবে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু রহস্যজনক ঘটনা ঘটেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আগেই ডিএসইর পর্ষদ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান ছিলেন স্বতন্ত্র পরিচালক কাওসার আহমেদ, রুবাবা দৌলা এবং শেয়ার হোল্ডার পরিচালক শরীফ আনোয়ার হোসেন। পরবর্তীতে শরীফ আনোয়ার হোসেন পদত্যাগ করেন। এরপর দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। বিষয়টি তদন্তের জন্য সার্ভেইল্যান্সের সহায়তা প্রয়োজন ছিল। ডিএসই এবং বিএসইসি দুই প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব সার্ভেইল্যান্স রয়েছে। কিন্তু ডিএসইর তদন্ত কমিটি নিজেদের সার্ভেইল্যান্স বাদ দিয়ে বিএসইসিতে তথ্যের জন্য চিঠি দেয়। এরপর গত ১ জুলাই বিএসইসির সার্ভেইল্যান্সের উপপরিচালক মো. সহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠি তদন্ত কমিটির প্রধান কাওসার আহমেদকে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, ডিএসইতে যোগদানের পর ৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কারসাজিমূলক শেয়ার লেনদেনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আলোচ্য সময়ে তিনি ১ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন। এর মধ্যে ১২ লাখ ৬৩ হাজার টাকার শেয়ার কিনেছেন। বিক্রি করেছেন ৯৪ লাখ ২৩ হাজার টাকার শেয়ার। এখানে তিনি ৩০ লাখ ১২ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। তিনি যেসব শেয়ার লেনদেন করেছেন সেগুলো হলো-অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, সিএনএ টেক্সটাইল, এমারেল্ড অয়েল, ফরচুন সুজ, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট এবং সোনালী পেপার। তবে বিএসইসির একটি সূত্র যুগান্তরকে বলেছে ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ নির্দোষ নন। কারণ কোনো পরিচালকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থাকলে স্টক এক্সচেঞ্জে যোগদানের পর তা কনফ্লিক্ট মিটিগেশন কমিটিকে জানাতে হয়। কিন্তু যুগান্তরকে রিপোর্ট করার আগে তিনি কমিটিকে তা জানাননি। ডিএসইর অন্যান্য পরিচালকেরও এই সমস্যা রয়েছে। ফলে ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে পুরো বোর্ড ভেঙে দিতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে পুরো পর্ষদ ভেঙে দিলে বাজারে খারাপ বার্তা যাবে। ফলে অপরাধ এড়িয়ে গেছে কমিশন। এদিকে দায়মুক্তি দেওয়ার পর আবারও পর্ষদে যোগদান দিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি সব ধরনের কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।